কুরআন বোঝার চেষ্টা করা এবং কুরআনচর্চায় লিপ্ত থাকতে পারা বান্দার জন্য একটি নিয়ামত
- আপডেট সময় : ১২:১৩:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৭৩ বার পঠিত
কুরআন বুঝতে কী লাগে
সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম!
কুরআন বুঝতে আকলের দরকার। সচ্ছ অন্তর দরকার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আকল ও সচ্ছ অন্তরওলাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভ‚মন্ডল সুষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলী। (সুরা আলে ইমরান:১৯০)
অবশ্যই এতে বিবেকসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা তাহা:৫৪)
নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। (সুরা নাহল:১২)
নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যারা আছে অন্ত:করণ, অথবা যে শ্রবণ করে মনোযোগের সাথে (সুরা কাফ:৩৭)
সুতরাং কুরআন বোঝার চেষ্টা করা এবং কুরআনচর্চায় লিপ্ত থাকতে পারা বান্দার জন্য একটি নিয়ামত।
মুহতারাম হাজিরিন!
মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবেন। আল্লাহপাক আমাকে এখলাসের নিয়তে আলোচনা করার এবং আপনাদের সবাইকে আমলের নিয়তে শোনার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ বলেছেন, উলুল আলবাব বা সত্যিকার বুদ্ধিমানরাই কুরআন বুঝতে পারে। তাই কুরআন বোঝার জন্য প্রথমেই আমাদের জানা দরকার উলুল আলবাব বা সত্যিকার বুদ্ধিমান কারা?
সত্যিকার বুদ্ধিমানের আলামত পাঁচটি:
১. গুণীর গুণাগুণ বর্ণনা করার অভ্যাস অর্জন করা।
২. বিনয়ী হওয়া।
৩. সুন্দর লাইফস্টাইল গ্রহণ করা।
৪. সৎসঙ্গ গ্রহণ করা।
৫। অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা।
এই পাঁচটি গুণে গুণান্বিত হতে পারলে সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান। সে লোকই বোঝে আমল করে জান্নাতের রাজপথ অতিক্রম করতে পারবে। আর এ জন্যই কুরআনের সূচনা হয়েছে সুরা ফাতিহা দ্বারা,যেখানে বুদ্ধিমানের পাঁচটি গুণের আলোচনা করা হয়েছে। সুরা ফাতিহায় কিভাবে এই গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে, চলুন বুঝতে চেষ্টা করি।
বুদ্ধিমানের প্রথম গুণ হলো গুণীর গুণাগুণ বর্ণনা করার অভ্যাস অর্জন করা। কেননা, সমস্ত গুণের আধার হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। তাই যে সত্যিকার বুদ্ধিমান, সে অবশ্যই আল্লাহর প্রসংসা করবে। সুরা ফাতিহার প্রথম শিক্ষাই হচ্ছে, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন- আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি। আমরা বলি, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতের প্রতিপালক।
বুদ্ধিমানের দ্বিতীয় গুণ বিনয়ী হওয়া। বিনয়ীরা মাথা নত করে চলে। চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের বিনয় হলো নিজের শরীরের সবচেয়ে সম্মানের স্থান কপালকে মাঠির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আল্লাহকে সিজদা করা। আল্লাহর ইবাদত করা। সুরা ফাতিহার শিক্ষা হলো, ইয়্যাকা না’বুদু- হে আল্লাহ! আমরা আপনারই ইবাদত করি।
বুদ্ধিমানের তৃতীয় গুণ সুন্দর লাইফস্টাইল গ্রহণ করা। সুন্দর লাইফস্টাইলের রাস্তা হলো সিরাতে মুসতাকিম। সুরা ফাতিহা বলছে, ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতে মুসতাকিমের রাস্তা হলো সিরাতে রাসুল।
কোন পথ জান্নাতের পথ তথা সিরাতে মুসতাকিম, সেটা নবির কাছ থেকেই আমাদের জানতে হবে। কারণ, ওয়া আহসানাল হাদিয়ে হাদিউ মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক বা হিদায়তকারী হলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা কুরআনের এক আয়াতে বলেছেন- আর নিশ্চয়ই এই পথই আমার সরল পথ এই পথই তোমরা অনুসরণ করে চলবে। (সুরা আনআম:১৫৩)
বুদ্ধিমানের চতুর্থ গুণ সৎ সঙ্গ গ্রহণ করা। সৎসঙ্গের পরিচয় তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- (হে আল্লাহ! আমাদেরকে) তাদের পথ দেখান, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন- (সুরা ফাতিহা:৭)
বুদ্ধিমানের পঞ্চম গুণ অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা। আল্লাহ বলেন- তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গজব বর্ষিত হয়েছে। তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট। (সুরা ফাতিহা:৭)
অসৎ আবার দুই প্রকার-এক প্রকার হলো জেনেবুঝে গোমরাহ বা জ্ঞানপাপী। কুরআনের ভাষায় এরা হলো মাগজুব আলাইহিম, যেমন ইহুদিরা এবং যুগে যুগে মুসলমানের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা তাদের প্রেতাত্মারা। আরেক প্রকার হলো না জেনে গোমরাহ, যেমন নাসারা ও বিদআতিরা। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে মাগজুব আলাইহিম এবং দ্বোয়াল্লিনদের থেকে হেফাজত করুন। সকলে বলুন, আমিন।
মুহতারাম হাজিরিন!
জীবন একটি পরীক্ষার নাম। আল্লাহ বলেন, যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। (সুরা মুলক:২)
জীবন-পরীক্ষার পাঠ্যসূচির নাম কুরআন। শিক্ষক হলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। পরীক্ষার হল হলো দুনিয়া। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনে কথা, কাজ ও সমর্থনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসির পেশ করে গেছেন, পরিভাষায় যাতে হাদিস বলা হয়। কুরআনের প্রথম দুআ হচ্ছে ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম; আর সিরাতে মুসতাকিম হলো জীবন-পরীক্ষায় সফল ও পুরস্কারপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হওয়ার কামনা এবং জীবন-পরীক্ষায় বিফল বা অভিশপ্ত গোমরাহদের দলভুক্তি থেকে মুক্তিলাভের প্রার্থনা।