শবে মে’রাজ
- আপডেট সময় : ১০:০১:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ২২৩ বার পঠিত
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সা: কে আল্লাহ তা’আলা একদা রাত্রে জাগরিত অবস্থায় স্বশরীরে মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নিয়ে যান। সেখান থেকে সাত আসমানের উপর এবং সেখান থেকেও আরও উপরে যতদূর আল্লাহর ইচ্ছা নিয়ে যান। সেখানে আল্লাহর সাথে রাসুল সা: কথাবার্তা বলেন। তখনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান দেয়া হয় এবং সেই রাতেই রাসুল সা: আবার দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। একে মে’রাজ বলে।
প্রসিদ্ধ আছে যে, ২৭ শে রজব রাতে রাসুল সা: এর মে’রাজ হয়েছিল। ‘‘প্রসিদ্ধ’’ কথাটা এজন্য বলা হল যে, কোন মাসে এবং কোন তারিখে মে’রাজ হয়েছিল- এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। প্রসিদ্ধ হল রজব মাসের ২৭ তারিখেই এটা হয়েছিল। একথা কুরআনে এবং হাদিসে আছে, ইতিহাসেও আছে। এটা সত্য ঘটনা। কিন্তু কোন তারিখে হয়েছিল এটা নিয়ে মতভেদ আছে। ২৭ শে রজব দিনের সাথে বা এই রাতের সাথে বিশেষ কোন আমল জড়িত না থাকার কারণে এই মতভেদ হয়েছে। ২৭ শে রজব দিনের সাথে বা এই রাতের সাথে বিশেষ কোন আমল জড়িত থাকলে এই মতভেদ হতে পারত না। কারণ তখন মানুষের মনে থাকত যে, ঐ দিনে বা ঐ রাতে আমাদেরকে ঐ আমলটা করতে হবে। এভাবে সেই তারিখ নিয়ে আর মতভেদ হতে পারতো না। কিন্তু মে’রাজের রাতে অর্থাৎ রজবের সাতাশে রাতে বিশেষ কোন আমল বা বিশেষ কোন ইবাদত সহীহ হাদীসের ভিতরে আসেনি। কিংবা পরবর্তী দিন রোযা রাখার কথাও সহীহ হাদিসে আসেনি। তাই নির্দিষ্ট তারিখ কেউ মনেও রাখেননি। তবে যদি কেউ এ রাতে নফল ইবাদত করতে পারেন। অন্যান্য রাতে নফল ইবাদত করলে যেমন সাওয়াব, সেরকম সাওয়াব পাওয়া যাবে। পরের দিন কেউ যদি নফল রোযা রাখেন, রাখতে পারেন। অন্যান্য দিন নফল রোযা রাখলে যেমন সওয়াব সে রকমই সওয়াব পাওয়া যাবে।
যাহোক মে’রাজের ঘটনা হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসুল সা: কে বোরাকে করে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে যান। সেখান থেকে সপ্তম আসমানের উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবার পর্যন্ত নিয়ে যান। আবার ঐ রাতের ভিতরে তিনি ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি ফজরের নামায আদায় করেন। কেউ যদি অস্বীকার করলে, তাহলে তার ঈমান থাকবে না। কোন যুক্তিতে ধরুক বা না ধরুক, বিজ্ঞান এটাকে স্বীকার করুক না করুন, তবুও আমাকে বিশ্বাস করতেই হবে।
রাসুল সা: ফজরের নামাযের পর সাহাবায়ে কেরামকে এই মে’রাজের বর্ণনা শোনালেন যে, দুজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে যান। সেখান থেকে সপ্তম আসমানের উপর পর্যন্ত আমি পৌঁছি। আল্লাহর দরবার পর্যন্ত পৌঁছি। আল্লাহর সাথে কথা হয়। আল্লাহপাক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছেন। তিনি বিস্তারিত ঘটনা বয়ান করে শোনান। এই ঘটনা শুনার পর তখন মক্কার কাফের নেতৃবৃন্দ শুনে উপহাস করতে শুরু করল যে, কাল্পনিক ঘটনা! তারা বলতে লাগল এক রাতের ভিতরে সাত আসমানের উপরে যাওয়া আবার ফিরে আসা সম্ভব নয়।
কাফেররা ছুটে গেল হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি: এর কাছে। তারা ভাবল মুহাম্মদের বড় শিষ্যের কাছে যেয়ে দেখি সে কি বলে? হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি: ঐ দিন ফজরের জামাআতে ছিলেন না। রাসুল সা: এর মুখ থেকে তখনও ঘটনা তিনি শোনেন নি। কাফেররা তাঁর কাছে গেল। গিয়ে বলল: যদি কোন লোক বলে যে, সে রাতের অল্প সময়ের ভিতরে সাত আসমানের উপর পর্যন্ত গিয়েছে, আবার ফজরের আগে দুনিয়ায় ফিরে এসেছে। এরকম যদি কেউ বলে, তুমি কি তা বিশ্বাস করবে? হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি: জিজ্ঞাস করলেন কে বলেছেন, তারা বলল: তোমাদের নবী! হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি: সাথে সাথে বলে উঠলেন তাহলে আমি বিশ্বাস করি, তিনি সত্যই বলেছেন। এখান থেকেই আবু বকর সিদ্দীক রাযি: কে ‘‘সিদ্দীক’’ বলা হয়। ‘‘সিদ্দীক’’ অর্থ চরম বিশ্বাসী, পরম বিশ্বাসী। শোনা মাত্রই তিনি বিশ্বাস করেছিলেন। কোন যুক্তি তালাশ করেন নি, কোন বিজ্ঞান তালাশ করেন নি। এটা সম্ভব কি অসম্ভব তা চিন্তায় আনেননি। যেহেতু আল্লাহর রাসুল সা: বলেছেন তাই বিনা দ্বিধায়, বিনা বাক্যে বিশ্বাস করেছেন।
কাফেররা দেখল যে এখানে তো কাজ হল না, তাহলে আবার মুহাম্মদের কাছে যাই। এবার যেয়ে জিজ্ঞাসা শুরু করল, মুহাম্মদ! তুমি যদি বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে থাক, তাহলে বল বায়তুল মুকাদ্দাসের কয়টি সিড়ি আছে? কয়টা জানালা আছে? কয়টা দরজা আছে? ইত্যাদি। রাসুল সা: সিড়ি গণনা করেত যান নি। কয়টা দরজা-জানালা আছে তাও জরিপ করতে যান নি। কিন্তা তারা জিজ্ঞাসা করে বসেছে, এখন যদি জাওয়াব না দেয়া যায় তাহলে রাসুল সা: মিথ্যুক প্রমাণিত হবেন। তাই রাসুল সা: এর খুব পেরেশানী হল যে, আজ যদি এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারি, তাহলে ওরা আমাকে মিথ্যুক সাবস্ত করবে। হাদিসে এসেছে রাসুল সা: বলেন: তখন আমার এত পেরেশানী হল যে, ওরকম পেরেশানী আমার আর কখনও হয়নি। রাসুল সা: আরও বলেন: অর্থাৎ অত:পর আল্লাহ পাক বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার চোখের সামনে তুলে ধরলেন, আর তারা যা জিজ্ঞাসা করছিল আমি দেখে দেখে গণনা করে করে তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। সুবহানাল্লাহ!
মে’রাজের ঘটনা বয়ান করে রাসুল সা: বলেন: আমার কাছে দুইজন ফেরেশতা আসলেন, আমি উম্মে হানির ঘরে ঘুমন্ত ছিলাম। তারা আমাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বায়তুল্লাহর কাছে হাতীমের ভিতরে নিয়ে গেলেন। সেখান থেকে যমযম কুয়ার কাছে আমাকে নেয়া হল। সেখানে আমার সীনা চাক বা বক্ষ বিদারণ করা হল। আমার সীনা ফেড়ে তার মধ্য থেকে কলব হার্টটাকে বের করা হল। কলব ফেড়ে তার থেকে কি একটা বস্তু বের করা হল। তারপর যমযমের পানি দিয়ে কলবটাকে ধুয়ে আবার যথাস্থানে কলবটাকে স্থাপন করে দেয়া হল। এটাকে ফার্সীতে বলা হয় সীনা চাক অর্থাৎ বক্ষ বিদারণ।
রাসুল সা: এর সীনা চাক করার ঘটনা তিনবার ঘটেছে। প্রথমবার যখন শিশু ছিলেন, যখন হালিমা সাদিয়ার ঘরে ছিলেন সে সময়। তিনি হালীমা সাদিয়ার ছেলের সাথে অর্থাৎ দুধ ভাইয়ের সাথে খেলা করতে গিয়েছিলেন। তখন ফেরেশতারা এসে রাসুল সা: এর সীনা চাক করেন। শিশু সুলভ সব প্রবণতা থেকে দুর করে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়বার যৌবনের সময়। যৌবন সূলব যত উচ্ছৃঙ্খলতা, যত পাপের মনোভাব থাকে সেগুলো থেকে দূর করে দেয়া হয়েছিল। আর তৃতীয়বার মে’রাজে নেয়ার সময় হয়েছিল।