‘পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত ও ইসলাম বিরোধী বিষয় বাতিল না করলে রাজপথে নামতে বাধ্য হব’
- আপডেট সময় : ১১:০০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা ইসমাঈল নুরপুরী বলেছেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার এদেশে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের স্বপন্ এদেশে বাস্তবায়ন হবে না। তারা ইসলামকে মিটিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেন। তিনি বলেন, পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত ও ইসলাম বিরোধী পাঠ বতিল না করলে আমরা রাজপথ ছড়বো না। দেশের মানুষকে দুর্বল ভাববেন না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ইসলাম বিরোধী কোনো আইন করবে না। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে যে ইসলাম বিরোধী লেখা ঢুকানে হয়েছে তা কি? সুতরাং মুনফেকী বাদ দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের চিন্তা চেতনার আলোকে শিক্ষা সিলেবাস তৈরি করতে হবে। অন্যথায় পরিণতি ভালো হবে না।
তিনি (০৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে বর্তমান সিলেবাসে বিতর্কিত অধ্যায় ও আমাদের করণীয় শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পুরানা পল্টনস্থ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজীর পরিচালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনডিএম এর সভাপতি ববি হাজ্জাজ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সাবেক ভিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা তারেকুল হাসান, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্মমহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাহবুবুল হক, ইসলামী ছাত্রমজলিসের সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আশিকুর রহমান জাকারিয়া, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা শরীফ হোসাইন, সহ-বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, নির্বাহী সদস্য মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা মুহসিন উদ্দীন বেলালী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি মাওলানা নুর মোহাম্মদ আজিজী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজী প্রমুখ।
সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, আমাদের এই দেশ ১৮শ শতাব্দীতে ইংরেজ বেনিয়া কর্তৃক শাসিত হয়ে পরবর্তীতে স্বাধীনতার নামে ভারতবর্ষ তৈরি হলেও এখানে ইসলাম এবং মুসলমানদের আকিদা বিশ্বাস উপযোগী কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা ও সরকার কাঠামো তৈরি হয়নি। বরং ইংরেজদের আনুকল্য নিয়ে গান্ধী শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে হিন্দুরা তাদের চিন্তা চেতনার ষোল কলা পূর্ণ করে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। যার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এখানে মানুষ পাকিস্তানের জুলুম-নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের চিন্তা চেতনা বাস্তবায়নের কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। বরং একটি কুচক্রী মহল স্বাধীনতা যুদ্ধকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মোড়কে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে দেশকে ধর্মহীন সেকুলার রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে। ঐ শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের আপামর মুসলিম জনগণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ শিক্ষার নামে তা ছিল ধর্মহীন সেকুলার নির্ভর শিক্ষা সুপারিশ। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ইসলামী জীবনাদর্শন ও জীবন ব্যবস্থার ভিত্তিতে পুনর্গঠন করার দায়িত্ব ছিল, সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেই দাবি করা হলো যে, আদর্শ জাতি গঠনই এ সরকারের লক্ষ্য। অথচ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তাও আদৌ যথার্থ নয়।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার তিন মেয়াদে অভিন্ন কারিকুলাম নামে বারবার সিলেবাস প্রণয়ন করে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। শিক্ষা সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে ইসলামী সংস্কৃতি ও চেতনা পরিপন্থি অনেক অধ্যায় ও লেখা সংযোজন করা হয়েছে। যা আগামী প্রজন্মের ঈমান আকিদাকে ধ্বংস করার পায়তারা। এর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার ও বিবর্তনবাদ ইস্যু দুটি সব থেকে বেশী জঘন্য। এ ছাড়াও বর্তমান শিক্ষা সিলেবাসের বিভিন্ন পাঠ্য বইয়ে আপত্তিকর এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে যেগুলো আবহমানকাল থেকে চলে আসা আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, আমাদের সন্তানদের ধর্মান্তরিত করার জন্য ও অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঈমান আকিদা পরিপন্থি লেখা ঢুকানো হয়েছে। এগুলো বাংলাদেশ থেকে হয়নি তা ইউরোপ আমেরিকা ও ভারত থেকে হয়েছে। ভারতের সংস্কৃতি বাংলাদেশে চলতে পারে না। এ শিক্ষা বাংলাদেশে চলতে দেওয় যায় না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণ করতে হবে যে শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন মানুষ ভলো মুসলমান হবে, ভালো দেশপ্রেমিক হবে, সৎ ও যোগ্য হবে।
এনডিএম এর সভাপতি ববি হাজ্জাজ বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম বিরোধী কথাবার্তা থাকা অবান্তর। সবধরণের স্কলারদের দিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতি বাতিলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সাবেক ভিপি বলেন, মোদী বিরোধী আন্দোলনের কারণে অনককে কারাবরণ করতে হয়েছে এখনও কারাবরণ করছে। উচ্চ শিক্ষা বেকারত্বের কারখানায় পরিণত হয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শিক্ষা কারিকলাম ঠিক করতে হবে। সরকার তা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে তা তাদের জন্য কল্যাণ হবে অন্যথায় শিক্ষার দাবী সরকার পতনের দাবীতে পরিণত হবে।
আমার বাংলাদেশ পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, শিক্ষা সিলেবাস যারা প্রণয়ণ করেছে আমার মনে হয় তাদের মত গর্দভ ও অশিক্ষিত পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আমাদের বিকল্প শিক্ষানীতি পেশ করে সকলে মিলে তা বাস্তবায়নে মাঠে নামলে কেউ রুখতে পারবে না।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা তারেকুল হাসান বলেন, পাঠ্যবইয়ে ১৯৪৮ সালে মুসলমানদের অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়নি অথচ এ বিষয়টি ভারতের হিন্দুরাও ভালোমতে জানে ভারতবর্ষে মুসলমানদের অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। ইতিহাসকে বিকৃতি করে আগামী প্রজন্মকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কাদের হাতে তা দেশের মানুষ জানতে চায়?
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্মমহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের চিন্তা চেতনায় ঢুকানো হচ্ছে মনে মনে ছেলে মেয়ে হতে পারে মেয়ে ছেলে হতে পারে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সেমিনারে আগামী প্রজন্মের ঈমান আকিদা সংরক্ষণে নিম্মোক্ত ৫ দফা দাবী সরকারের কছে পেশ করা হয় –
১.বর্তমান শিক্ষা সিলেবাস থেকে বিতর্কিত ও ইসলামবিরোধী সকল লেখা বাদ দিতে হবে।
২. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে একাধিক বিশেষজ্ঞ আলেম ও ইসলামী স্কলারকে যুক্ত করতে হবে।
৩. শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. সরকারী-বেসরকারী সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিদ্যালয়ে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের পর্দার সাথে শিক্ষা গ্রহণে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা।
৫. শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ দ্বারা শিক্ষক প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।