বিচিত্র: জঙ্গলটির গাছগুলো সবই বাঁকা বাঁকা
- আপডেট সময় : ০৪:২৯:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩ ১২৬ বার পঠিত
পোল্যান্ডের পশ্চিম পমেরানিয়ার ছোট্ট শহর গ্রিফিনোর কাছেই আশ্চর্য এক জঙ্গলের দেখা পাবেন। এখানকার শ চারেক পাইনগাছ গোড়া থেকেই অদ্ভুতভাবে বেঁকে গেছে। মোটামুটি নব্বই ডিগ্রি একটা বাঁকের পর
এগুলো আবার কিন্তু সোজা উঠে গেছে। এই অসামঞ্জস্য বাদ দিলে গাছগুলো কিন্তু গড়পড়তা বেশ স্বাস্থ্যবান। এদের মধ্যে কোনো কোনোটির উচ্চতা ৫০ ফুটের কাছাকাছি। তবে গাছগুলোর এমন আশ্চর্যজনকভাবে বেঁকে যাওয়ার কারণ কী, তা নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলেও এখনো এই রহস্যের সঠিক সমাধান পাওয়া যায়নি।
গ্রিফিনো শহরটি মোটামুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকেই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ, যুদ্ধের কারণে সে সময় এখানকার লোকেরা অন্য এলাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত শহরে আর কোনো মানুষ বসতি গাড়েননি। ধারণা করা হয়, যুদ্ধের আগে যেসব মানুষের এই এলাকায় বাস ছিল, তাঁদের গাছগুলো এমনভাবে বেড়ে ওঠার রহস্য জানা ছিল। তবে তাঁদের কারও খোঁজ না পাওয়ায় এই রহস্যের সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আর এত দিন পর তাঁদের মধ্যে আর কজন বেঁচে আছেন, তা-ও এক প্রশ্ন।
গাছগুলোর এই বাঁক খুব দীর্ঘ নয়, বড়জোর দুই-তিন মিটার পর্যন্ত এমন বক্রভাবে বেড়ে উঠেছে। আগেই বলেছি, পাইনগাছগুলোর আশ্চর্য এই আকারের কারণ নিয়ে অনেকেই অনুসন্ধান করেছেন, তবে এ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এদের এমন চেহারার কারণ কী হতে পারে, তা নিয়ে নানা তত্ত্ব ডালপালা মেলার পথে বাধা হয়নি।
মজার ঘটনা, যেসব কারণকে দায়ী করা হয় গাছগুলো বাঁকা হওয়ার বিষয়ে, এগুলোর কোনো কোনোটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, কোনোটায় আবার মানুষের হাত আছে। তো যেসব কারণের কথা বলা হয় তার একটি হলো, ১৯৩০-এর দশকে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের পাইনগাছ লাগানো হয় জায়গাটিতে। গাছগুলো ছোট থাকতেই জার্মান ট্যাংক এদের অনেকটা সমান করে দেয়। এ সময় যে গাছগুলো টিকে যায়, সেগুলোর এই হাল হয়।
অনেকে আবার বলেন, প্রবল কোনো তুষারঝড় গাছগুলোকে এমন আকার দিয়েছে। তবে এই বনের বাইরের কোনো গাছের মধ্যে এ সমস্যা দেখা না দেওয়ায় তত্ত্বটি সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জিনগত মিউটেশনকে এর জন্য দায়ী করেছেন কেউ কেউ। এমনকি এতে ভিনগ্রহবাসীর হাত আছে এমন তত্ত্বও শোনা গেছে।
আরেকটি বিচিত্র কারণের কথা শোনা যায়, সেটা হলো এই নির্দিষ্ট অঞ্চলে একধরনের অসাধারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করেছে, যার ফলে গাছগুলো সোজা হওয়ার পরিবর্তে উত্তর দিকে বেঁকে গেছে। কিন্তু সেই তত্ত্বও বিজ্ঞানর দৃষ্টিতে যুক্তিসংগত নয়, কারণ মাধ্যাকর্ষণ জিনিসগুলোকে নিচের দিকে টানে, বক্ররেখায় নয়।
আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে, গাছগুলোর রোপণের পর স্থানীয় বনকর্মী কিংবা কৃষকেরাই এর আকারে বিকৃতি ঘটান। জাহাজ কিংবা আসবাব তৈরির জন্য প্রাকৃতিকভাবে বাঁকা কাঠ পাওয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। কারও কারও অনুমান, গাছগুলোর ওপর বাহ্যিক শক্তি প্রয়োগ করা হয় এদের ৭–১০ বছর বয়সে। পরে যুদ্ধ লেগে যাওয়ায় এর সুফল আর ঘরে তুলতে পারেননি তাঁরা।
তবে ঘটনা যা-ই হোক, জঙ্গলটি এখন উত্তর পোল্যান্ডের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। বিকৃতিও যে একটি জায়গাকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে, এর প্রমাণ এই অরণ্য। এ ধরনের অদ্ভুত গাছ দেখা এমনিতেই চমকপ্রদ ব্যাপার, তার ওপর গোটা একটা জঙ্গলই এমন গাছের। কাজেই দেশের তো বটেই, ভিনদেশি পর্যটকেরা হাজির হন এখানে। অনেকে আবার সন্দেহের দোলাচলে ভোগেন, সত্যি এমন অরণ্য আছে কি না তা নিয়ে। নিশ্চিত হতে পা রাখেন জঙ্গলটিতে!
বিচিত্র একটি জঙ্গলের কথা বললাম, কীভাবে সেখানে যাবেন সেটা না বলি কীভাবে! পোল্যান্ডের শহর গ্রিফিনো কিংবা স্টায়চি থেকে গাড়িতে চেপে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় অরণ্যটিতে। গ্রিফিনো থেকে গাড়িতে লাগে মিনিট পনেরো, স্টায়চি থেকে আধ ঘণ্টা। আবার জার্মানির বার্লিন থেকেও খুব দূরে নয়। বাস কিংবা ট্রেনে ঘণ্টা চারেক লাগবে সেখানে পৌঁছাতে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া,