বিচিত্র: নদীর মাঝখানে ছোট্ট একটি পাথর ওই পাথরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি বাড়ি
- আপডেট সময় : ১০:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩ ১১০ বার পঠিত
সার্বিয়ার দ্রিনা নদীর মাঝখানে ছোট্ট একটা পাথর। চারদিকে নদীর জল যেন ফুঁসছে। আর ওই পাথরটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ি। নিঃসঙ্গ, ছোট্ট এই বাড়িটাকে একনজর দেখতেই পর্যটকেরা ছুটে যান সেখানে। মূলত ২০১২ সালে হাঙ্গেরির আলোকচিত্রী ইরেনি বেকারের তোলা এই বাড়িটির একটি ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে ফটো অব দ্য ডে হিসেবে প্রকাশের পর গোটা পৃথিবীর মানুষের নজরে আসে এটি। জায়গাটি বাজিনা বাস্তা নামের একটি শহরের কাছে। নদীর বুকে পাথরের মধ্যে এক বাড়ি, চারপাশে আবার তারাজাতীয় উদ্যানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সব মিলিয়ে জায়গাটিকে অন্য রকম এক সৌন্দর্য দিয়েছে। বলা চলে বাজিনা বাস্তা নামের শহরটিকেও ভিনদেশি পর্যটকেরা চিনতে শুরু করেছেন খুদে এই বাড়ির কল্যাণে। দ্রিনা নদীর এই বাড়ির গল্পটার শুরু ১৯৬৮ সালে। তখন মিলিজা মান্দিক ও মিলান মান্দিক নামের দুই ভাই বন্ধুদের নিয়ে নদীটিতে সাঁতার কাটতে যান। এ সময় নদীর মাঝখানে একটি পাথরে বিশ্রাম নিতে থামেন তাঁরা। আরেকটু আয়েশ করে জায়গাটির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য তাঁরা তীরে গিয়ে কিছু কাঠ নিয়ে আসেন এখানে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটা ঘরের মতো তৈরি করতে। তবে ওই সময় যে কাঠগুলো দিয়ে একটা ছাপড়ার মতো বানান পাথরের ওপরে, সেটাকে পরের বর্ষায় নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরের বছর কাঠসহ আরও কিছু উপকরণ দিয়ে আগের জায়গাতেই কেবিনের মতো ছোট্ট একটা ঘর তুললেন তাঁরা। একটু বিশ্রাম ও রোদের তেজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তৈরির সময় বাড়িটার নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসেন এই তরুণেরা নৌকায় করে। এখনো অবশ্য খুব একটা বেশি কিছু বদল হয়নি জায়গাটির। কারণ, নদীর জল পেরিয়েই আপনাকে পৌঁছাতে হবে ওই পাথর আর বাড়ির কাছে। তবে পাথরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটিকে প্রতিনিয়তই নদীর জলের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। সব সময় যে পারে তাও নয়। ৫৫ বছরে অন্তত ছয়বার ভেঙে নদীর জলে চলে গেছে বাড়িটি। তবে প্রতিবারই আবার নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে এটি। মিলিজা মান্দিক অনেকগুলো বছর বাড়িটির তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মজার ঘটনা, বাড়িটি শুরুর দিকে পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ার পর কিছুটা শক্তপোক্তভাবে জোড়া লাগানো হয় এর অংশগুলো। তখন এমনও হয়েছে, গোটা বাড়িটাই ভেসে গেছে জলের তোড়ে। মিলিজা ও অন্যরা মিলে তখন কেবিনটিকে আবার নিয়ে এসে পাথরের ওপর স্থাপন করেন। বাড়ি, কেবিন কিংবা ঘর যা-ই বলুন, এটি পঞ্চমবার ধ্বংস হয় ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে। ২০০৫ সালে পুনরায় তৈরি করা হয়, আবারও ভেসে যায়। এবার এটি তৈরি করা হলো কংক্রিটের দুটি বিম দিয়ে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সপ্তমবারের মতো ধ্বংস হয় বাড়িটি। আবার তৈরি করা হয় ২০১১ সালে। এ জন্য অবশ্য বাজনা বাস্তার অধিবাসীরা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। যতবারই নদীর জলের তোড়ে এটা ভেসে যায়, ভেঙে যায়, ততবারই আবার এটা পুনরায় তৈরি করেন তাঁরা। অবশ্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ছোট্ট, সুন্দর এই বাড়ির খবর শুরুতে আশপাশের মানুষ ছাড়া খুব কম লোকজনই জানতেন। তারপরই ২০১২ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফটো অব দ্য ডেতে প্রকাশ পায় বাড়িটির ছবি। ওটা তুলেছিলেন হাঙ্গেরির আলোকচিত্রী ইরেনি বেকার। আর তার পর থেকেই সার্বিয়া তো বটেই, বিদেশি পর্যটকেরাও দ্রিনা নদীর তীরে ভিড় জমাতে থাকেন। এমন একটা বাড়ি যে এখানে সত্যি আছে তা নিজের চোখে না দেখে বিশ্বাস করেন কীভাবে? তা ছাড়া এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয় এতে। আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়ানো তারাজাতীয় উদ্যানের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখারও সুযোগ মেলে। একপর্যায়ে বাড়িটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে ভিউকার্ডেও স্থান পেতে লাগল এর ছবি।
গভীর বনানী, খাড়া চুনাপাথরের পাহাড় আর দ্রিনা নদীর জলের স্রোতে সৃষ্টি গভীর গিরিখাদের জন্য বিখ্যাত জাতীয় উদ্যানটি। এদিকে ৩৪৬ কিলোমিটার লম্বা দ্রিনা নদী অবশ্য জনপ্রিয়তা পায় ইন্টারনেট যুগের অনেক আগে। নোবেলজয়ী লেখক ইভো আন্দ্রিকের সঙ্গে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস ‘ব্রিজ অন দ্য দ্রিনা’র মাধ্যমে, এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। কাজেই ইউরোপ ভ্রমণে গেলে সার্বিয়ার এই বাড়িটিই দেখে আসতে পারেন। চাইলে নদীর কিনারের প্ল্যাটফর্ম থেকে উপভোগ করতে পারেন জলের রাজ্যের মাঝখানের বাড়িটির সৌন্দর্য। সাধারণত সেখান থেকেই পর্যটকেরা বাড়িটি এবং আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। চাইলে নৌকায় চেপে পাথর ও বাড়িটার আরও কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে নদীর স্রোত কেমন সেটা বিবেচনায় আনাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া