ঈদ আমাদের জন্য কিসের শিক্ষা নিয়ে আসে?
- আপডেট সময় : ১০:১৩:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩ ২১৩ বার পঠিত
মাওলানা শহিদুর রহমান:
মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতি বছরে রয়েছে দুটি ঈদ। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদ শব্দটি আমরা সাধারণত খুশী অর্থেই ব্যবহার করি। মুলত: ঈদ শব্দটির আরবী উচ্চারণ হচ্ছে (আল ঈদ) বারবার আগমন করা। ঈদ যেহেতু প্রতি বছর আমাদের আনন্দ ও খুশীর বার্তা নিয়ে আসে, তাই আমরা এই খুশীর দিনকে ঈদ বলি।
ঈদ আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও প্রভুপ্রেম শিক্ষা দেয়। আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর আনুগত্যের শিক্ষা । পরস্পর ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ-বিদ্বেষ বর্জণের শিক্ষা। বাৎসরিক আনন্দের বার্তার শিক্ষা। সীমাহীন প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও কল্যাণের সওগাত শিক্ষা। কুরআনের নির্দেশিত পথে সমাজ নির্মাণের শিক্ষা । কুরআনের শাসন কায়েমের পদক্ষেপ গ্রহণের সবক নেওয়ার শিক্ষা। শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার আহবানের শিক্ষা।
ঈদের দিনে ঈদের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মাঠে গেলে একে অপরের হাতে হাত মিলালে, বুকে বুক রাখলে মানুষ সব কষ্ট ভুলে যায়। ঈদের নামাজের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার বন্ধন গড়ে উঠে। ঈদের দিনে কে কত দামী পোষাক পরলো, কে কত উন্নমানের পানাহার করলো সেটা দেখার বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হচ্ছে নিজ আত্মাকে কে কতটুকু নিস্পাপ রাখতে পারা, কে কতটুকু আল্লাহর দরবারে ত্যাগ স্বীকার করতে পারা। কে তার প্রভুর নৈকট্য লাভে কতটা ধন্য হওয়া। এটাই ঈদের মুল শিক্ষা।
এতীমদের সাথে নবীজীর ঈদ: ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। সমাজে বসবাসরত সবাই সুখে শান্তিতে থাকুক এটা ইসলামের শিক্ষা। কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বে, আবার কেউ শুন্য হাতে পথে পথে ঘুরে বেড়াবে। কেউ দশতলায় থাকবে, আবার কেউ গাছতলায় থাকবে। কেউ পেট পুরে আহার করবে, আবার কেউ অভুক্ত থাকবে এটা ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলামের নীতি হচ্ছে মুসলিম ভাই হিসাবে একে অন্যের সুখ-দু:খ সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া। কোনো ভাই ভালো থাকতে দেখলে অন্য ভাই আনন্দিত হওয়া। দু:খ-বেদনা হাসি-কান্না সবকিছুই একসঙ্গে উপভোগ করা। প্রতি বছর ঈদ আসে আবার চলে যায়। সবাই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীও আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ঈদ করা। সুন্দর-সুন্দর ও দামী পোষাক পরা, উন্নত মানের খাবার খাওয়া। খাবারের সুঘ্রাণে আশপাশ মোহিত হওয়া। বাড়ীর পাশ দিয়ে যাবার সময় বড়লোকের খাবারের একটু ঘ্রাণ নিয়েই গরীব-দু:খীদের একটু সুখ অনুভব করতে হওয়া। এটা কী মুসলমান সমাজের ঈদ? এটা কি মহানবী সা: এর আদর্শ? এটা মহানবীর আদর্শ হতে পারে না।
সমাজ বা দেশের কিছু লোককে আল্লাহ পাক সম্পদশালী করেছেন, অন্যদের করেননি। আল্লাহ পাক দেখতে চান, তারা পাড়া প্রতিবেশী অসহায় গরীবদের মুখে হাসি ফুটায় কিনা? দুখী মানুষের বিপদে তারা সাহয্যের হাত প্রসারিত করে কি না? সাহায্য করতে না পারলেও একটু সহানুভূতি প্রকাশের জন্য তার পাশে দাড়ায় কি না? অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় আমাদের সমাজে এটি নেই! প্রতি বছর ঈদ আসে কিন্তু গরীব-দু:খীরা মুখ বেজার করে থাকে। আর আফসোস করে বলে হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ধৈর্য বাড়িয়ে দিন।
আমাদের প্রিয় নবী সা: কিন্তু গরীব -দু:খীদেরকে কাছে টেনে নিতেন। তাদের সাহায্য-সহযোগীতার জন্য সর্বদাই ব্যাকুল থাকতেন। প্রিয় নবী সা: এর জীবনে ও ঈদ এসেছিলো। কিন্তু প্রাণের নবী, করুণার ছবি কখন ও একা ঈদ উপভোগ করেননি। বরং গরীব-দু:খী অসহায়দের সঙ্গে নিয়ে ঈদ করেছেন।
একবার মহানবী সা: ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ঈদগাহে যাচ্ছিলেন, পথে এক অসহায় ছোট শিশুকে কাঁদতে দেখে তার কাছে গেলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন ! শিশুটি জানালো আমার পিতা মাতা নেই! আমি অসহায়! দয়াল নবীর অন্তর গলে গেলো! তিনি বললেন আমি যদি তোমার পিতা হই, আয়েশা যদি তোমার মাতা হয়, আর ফাতেমা যদি তোমার বোন হয়, তাহলে কি তুমি খুশি হবে? ছেলেটির মুখে তখন ঈদের আনন্দ ঝলমল করে উঠলো। তখন প্রিয় নবী সা: তাকে বাড়ী নিয়ে গেলেন। আয়েশা রা: তখন ছেলেটিকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিলেন এরপর প্রিয় নবী সা: ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের জামাতে শরীক হলেন। এটাই আমাদের ঈদের মুল শিক্ষা।
আমরা কি আমাদের মধ্যে এতিম অসহায়, গরীব লোকদের পাশে টেনে নিতে শিখেছি? তাদের সাথে আমরা যে আচরণ করছি এতে কি তারা আমাদের প্রতি খুশি? আমরা কি পেরেছি তাদের হৃদয়-মন জয় করতে?
তাই আসুন! নবীর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গরীব-অসহায়, এতীম-অনাথদের সুখে-দু:খে তাদের পাশে দাড়িয়ে নবীর খাটি উম্মত হওয়ার পরিচয় দেই।