ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ব্যারিস্টার নাজির ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে শিশুদের ফ্রি খৎনা প্রদান Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ফাতেমা খাতুন আদর্শ মহিলা মাদরাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে বৃদ্ধা ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার ঘর দখলের অভিযোগ :প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদরাসার ৬৬ তম বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন ২৮ ডিসেম্বর Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে সংবর্ধনা Logo সিলেটের বিশ্বনাথে হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের ২৯তম হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় দুই শিক্ষানুরাগীকে সংবর্ধনা Logo বিশ্বনাথে নব নিযুক্ত শিক্ষা অফিসার নাস্তিক মাহমুদুল হক অপসারণ ও অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্টিত Logo ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে ৯ দফা ঘোষণা Logo তাবলিগের রাহবার আলেমরা, অন্য কেউ নয়

শবে বরাতের করণীয়

ইসলামিক মিডিয়া ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মার্চ ২০২৩ ১৯৮ বার পঠিত

‘বরাত’শব্দের অর্থ মুক্তি এবং শব -এর অর্থ রাত। অতএব ‘শবে বরাত এর অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তা’আলা অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য মানুষকে আহবান জানান এবং তাঁর নিকট চাইলে তিনি এসব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তাই এ রাতকে শবে বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়। শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল শবে বরাত।
এই রাতে কি কি করণীয় এ সম্পর্কে নবী করীম সা: ইরশাদ করেন-যখন শা’বান মাসের অর্ধেক হয়ে যায়, যখন ১৪ই তারিক দিবাগত রাত হয়, তখন তোমরা সেই রাত্র জাগরণ কর আর পরের দিন রোযা রাখ। এরপর রাসুল সা: আরো বলেন- আল্লাহ পাক এই রাতে প্রথম আসমানে চলে আসেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক বান্দার খুব কাছে চলে আসেন এবং মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন-তোমরা কেউ পাপী আছ, আমার কাছে মাফ চাইবে, আমি তাকে মাফ করে দিব। তোমাদের কেউ রিযিক চাওয়ার আছে, আমার কাছে রিযিক চাইবে আমি তাকে রিযিক দান করব। তোমাদের কেউ অসুস্থ আছ, রোগগ্রস্থ আছ, আমার কাছে রোগ থেকে মুক্তি চাইবে, আমি তাকে মুক্তি দিয়ে দিব। এভাবে আল্লাহ পাক এক একটা বিষয় উল্লেখ করে করে বলতে থাকেন: অমুকটা চাওয়ার আছে চাও আমি দিয়ে দিব। এভাবে এক একটা বিষয় উল্লেখ করে আল্লাহ পাক চাওয়ার জন্য বলতে থাকেন। সুব্হে সাদেক পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করে মানুষকে ডেকে ডেকে চাইতে বলেন, দু’আ করতে বলেন।
এই রাতে আল্লাহ তা’আলা যতগুলি বিষয় চাওয়ার বা দু’আ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে প্রথমে বলেছেন ক্ষমা চাওয়ার কথা। কারণ মানুষের ক্ষমা চাওয়া হল সবচেয়ে বড় চাওয়া, ক্ষমা পাওয়া হল মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। শবে বরাত সবকিছু চাওয়ার রাত, তবে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান চাওয়ার বিষয় হল ক্ষমা চাওয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চাওয়া হল ক্ষমা চাওয়া, সবচেয়ে বড় পাওয়া হল ক্ষমা পাওয়া। এ জন্যই এই রাতে আল্লাহ পাক প্রথমে গোনাহ থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা বলেছেন। এর সাথে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি চাওয়া, রোগ-শোক থেকে মুক্তি চাওয়া, বিপাদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়া এই সব কিছু চাওয়ার কথাও বলেছেন।
যাইহোক এই হাদীসের আলোকে বরাতের রাতের একটা আমল হল নফল ইবাদত করা। পরের দিন রোযা রাখা। আল্লাহর কাছ থেকে সবকিছু চেয়ে নেওয়া। বিশেষভাবে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এই হলো শবে বরাতের বিশেষ বিশেষ করণীয় আমল।
নফল ইবাদত বলতে কি বুঝায়? নফল ইবাদত বলতে বিশেষভাবে বুঝায় নফল নামায পড়া। নফল ইবাদত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে অর্থাৎ নফল ইবাদত দ্বারা বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করে অর্থাৎ আমার খুব কাছের মানুষ হয়ে যায়। এমনকি আমার ভালবাসার পাত্র হয়ে যায়। তাকে আমি ভালবাসতে শুরু করি। তখন সে যা চায় তাকে তাই দেই, যখন আমাকে ডাকে, তার ডাকে সাড়া দেই।
অতএব যে যত বেশী নফল নামায পড়বে, সে ততবেশী আল্লাহ পাকের ভালবাসা অর্জন করতে পারবে, সে তত বেশী আল্লাহ পাকের কাছের মানুষ হয়ে যাবে। অতএব আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য, আল্লাহর কাছের মানুষ হওয়ার জন্য বেশী বেশী নফল নামায পড়তে হবে। নফল নামাযের মাধ্যমে আমি যখন আল্লাহর কাছের মানুষ হয়ে যাব, তখন আল্লাহ পাকও আমার সব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করে দিবেন। আপন মানুষের চাওয়া-পাওয়া অপূর্ণ রাখা হয় না। তাই আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগে বিশেষভাগে নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। নফল নামাযের সাথে সাথে অন্যান্য নফল ইবাদতও করা যেতে পারে। কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। দু’আ দুরুদ পড়া যেতে পারে। যিকির আযকার করা যেতে পারে।
নফল নামাযের ব্যাপারে মনে রাখতে হবে ইশার পর থেকে নিয়ে সুব্হে সাদেক পর্যন্ত অর্থাৎ সেহরীর শেষ সময় পর্যন্ত সে সময়, এর ভিতরে যত নফল নামায পড়া হবে সেটাকে বলে তাহাজ্জুদ। তাই আমরা এ রাতে যত নফল নামায পড়ব, তা তাহাজ্জুদের নিয়তেও পড়তে পারি, নফলের নিয়তেও পড়তে পারি। দুই দুই রাকআত করে পড়া উত্তম।
অনেক মা বোন আছেন শবে বরাতের নামাযকে খুব কঠিন মনে করে বসে আছেন। তারা মনে করেন শবে বরাতের নামায কী পড়ব? নামাযের নিয়ত তো জানিনা! অথচ নিয়তের কোন জটিলতা নেই। দুই দুই রাকআত নফল নামাযের নিয়ত অথবা দুই দুই রাকআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করলেই হয়ে যায়। কোন নির্দিষ্ট সূরার বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোন সুরা দিয়ে পড়তে পারেন।
আবার অনেক মা বোন আছেন সালাতুত তাসবীহ পড়তে চান। সালাতুত তাসবীহও পড়া যায়।

 

ট্যাগস :

ফেসবুকে আমরা

শবে বরাতের করণীয়

আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মার্চ ২০২৩

‘বরাত’শব্দের অর্থ মুক্তি এবং শব -এর অর্থ রাত। অতএব ‘শবে বরাত এর অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তা’আলা অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য মানুষকে আহবান জানান এবং তাঁর নিকট চাইলে তিনি এসব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। তাই এ রাতকে শবে বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়। শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল শবে বরাত।
এই রাতে কি কি করণীয় এ সম্পর্কে নবী করীম সা: ইরশাদ করেন-যখন শা’বান মাসের অর্ধেক হয়ে যায়, যখন ১৪ই তারিক দিবাগত রাত হয়, তখন তোমরা সেই রাত্র জাগরণ কর আর পরের দিন রোযা রাখ। এরপর রাসুল সা: আরো বলেন- আল্লাহ পাক এই রাতে প্রথম আসমানে চলে আসেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক বান্দার খুব কাছে চলে আসেন এবং মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে থাকেন-তোমরা কেউ পাপী আছ, আমার কাছে মাফ চাইবে, আমি তাকে মাফ করে দিব। তোমাদের কেউ রিযিক চাওয়ার আছে, আমার কাছে রিযিক চাইবে আমি তাকে রিযিক দান করব। তোমাদের কেউ অসুস্থ আছ, রোগগ্রস্থ আছ, আমার কাছে রোগ থেকে মুক্তি চাইবে, আমি তাকে মুক্তি দিয়ে দিব। এভাবে আল্লাহ পাক এক একটা বিষয় উল্লেখ করে করে বলতে থাকেন: অমুকটা চাওয়ার আছে চাও আমি দিয়ে দিব। এভাবে এক একটা বিষয় উল্লেখ করে আল্লাহ পাক চাওয়ার জন্য বলতে থাকেন। সুব্হে সাদেক পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করে মানুষকে ডেকে ডেকে চাইতে বলেন, দু’আ করতে বলেন।
এই রাতে আল্লাহ তা’আলা যতগুলি বিষয় চাওয়ার বা দু’আ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে প্রথমে বলেছেন ক্ষমা চাওয়ার কথা। কারণ মানুষের ক্ষমা চাওয়া হল সবচেয়ে বড় চাওয়া, ক্ষমা পাওয়া হল মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। শবে বরাত সবকিছু চাওয়ার রাত, তবে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান চাওয়ার বিষয় হল ক্ষমা চাওয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চাওয়া হল ক্ষমা চাওয়া, সবচেয়ে বড় পাওয়া হল ক্ষমা পাওয়া। এ জন্যই এই রাতে আল্লাহ পাক প্রথমে গোনাহ থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা বলেছেন। এর সাথে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি চাওয়া, রোগ-শোক থেকে মুক্তি চাওয়া, বিপাদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়া এই সব কিছু চাওয়ার কথাও বলেছেন।
যাইহোক এই হাদীসের আলোকে বরাতের রাতের একটা আমল হল নফল ইবাদত করা। পরের দিন রোযা রাখা। আল্লাহর কাছ থেকে সবকিছু চেয়ে নেওয়া। বিশেষভাবে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এই হলো শবে বরাতের বিশেষ বিশেষ করণীয় আমল।
নফল ইবাদত বলতে কি বুঝায়? নফল ইবাদত বলতে বিশেষভাবে বুঝায় নফল নামায পড়া। নফল ইবাদত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে অর্থাৎ নফল ইবাদত দ্বারা বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করে অর্থাৎ আমার খুব কাছের মানুষ হয়ে যায়। এমনকি আমার ভালবাসার পাত্র হয়ে যায়। তাকে আমি ভালবাসতে শুরু করি। তখন সে যা চায় তাকে তাই দেই, যখন আমাকে ডাকে, তার ডাকে সাড়া দেই।
অতএব যে যত বেশী নফল নামায পড়বে, সে ততবেশী আল্লাহ পাকের ভালবাসা অর্জন করতে পারবে, সে তত বেশী আল্লাহ পাকের কাছের মানুষ হয়ে যাবে। অতএব আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য, আল্লাহর কাছের মানুষ হওয়ার জন্য বেশী বেশী নফল নামায পড়তে হবে। নফল নামাযের মাধ্যমে আমি যখন আল্লাহর কাছের মানুষ হয়ে যাব, তখন আল্লাহ পাকও আমার সব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করে দিবেন। আপন মানুষের চাওয়া-পাওয়া অপূর্ণ রাখা হয় না। তাই আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগে বিশেষভাগে নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। নফল নামাযের সাথে সাথে অন্যান্য নফল ইবাদতও করা যেতে পারে। কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। দু’আ দুরুদ পড়া যেতে পারে। যিকির আযকার করা যেতে পারে।
নফল নামাযের ব্যাপারে মনে রাখতে হবে ইশার পর থেকে নিয়ে সুব্হে সাদেক পর্যন্ত অর্থাৎ সেহরীর শেষ সময় পর্যন্ত সে সময়, এর ভিতরে যত নফল নামায পড়া হবে সেটাকে বলে তাহাজ্জুদ। তাই আমরা এ রাতে যত নফল নামায পড়ব, তা তাহাজ্জুদের নিয়তেও পড়তে পারি, নফলের নিয়তেও পড়তে পারি। দুই দুই রাকআত করে পড়া উত্তম।
অনেক মা বোন আছেন শবে বরাতের নামাযকে খুব কঠিন মনে করে বসে আছেন। তারা মনে করেন শবে বরাতের নামায কী পড়ব? নামাযের নিয়ত তো জানিনা! অথচ নিয়তের কোন জটিলতা নেই। দুই দুই রাকআত নফল নামাযের নিয়ত অথবা দুই দুই রাকআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করলেই হয়ে যায়। কোন নির্দিষ্ট সূরার বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোন সুরা দিয়ে পড়তে পারেন।
আবার অনেক মা বোন আছেন সালাতুত তাসবীহ পড়তে চান। সালাতুত তাসবীহও পড়া যায়।