ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ব্যারিস্টার নাজির ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে শিশুদের ফ্রি খৎনা প্রদান Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ফাতেমা খাতুন আদর্শ মহিলা মাদরাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে বৃদ্ধা ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার ঘর দখলের অভিযোগ :প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদরাসার ৬৬ তম বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন ২৮ ডিসেম্বর Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে সংবর্ধনা Logo সিলেটের বিশ্বনাথে হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের ২৯তম হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় দুই শিক্ষানুরাগীকে সংবর্ধনা Logo বিশ্বনাথে নব নিযুক্ত শিক্ষা অফিসার নাস্তিক মাহমুদুল হক অপসারণ ও অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্টিত Logo ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে ৯ দফা ঘোষণা Logo তাবলিগের রাহবার আলেমরা, অন্য কেউ নয়

একজন আদর্শ মায়ের কারগুজারি

ইসলামিক মিডিয়া ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:১৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ ১৬০ বার পঠিত

পৃথিবীকে সাজাতে মহান আল্লাহ বিচিত্রময় অসংখ্য মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ হলো সে সবের সেরা সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবসমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীদের বাদ দিয়ে দুনিয়া বিনির্মাণের কথা চিন্তা করা যায় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকেই একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
একজন আদর্শ মায়ের কারগুজারি
আফগানিস্তান। শুহাদায়ে কেরামের রক্তে সিঞ্চিত ভূমি। আমির আবদুর রহমান খান ছিলেন কাবুলের গভর্নর। তাঁর দাদা আমির দোস্ত মুহাম্মাদের একটি ঘটনা। কাফেরদের মোকাবেলায় তাঁর পুত্রের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন তিনি। দুই তিনদিন পর সংবাদ এলো, শাহজাদার পরাজয় আসন্ন। সেনাদের নিয়ে তিনি পিছু হটছেন। আর শক্রবাহিনী তাকে ধাওয়া করে আসছে। এ সংবাদ শুনে দোস্ত মুহাম্মাদের মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। লজ্জা, অনুশোচনা, দু:খে একেবারে ভেঙে পড়লেন তিনি। তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। একে তো পরাজয়ের গ্লানি। অন্যদিকে পুত্রের দুর্বলতা। লোকজনের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন তিনি।
বাদশা ঘরে এলেন। স্ত্রীকে পুত্রের দুর্বলতার কথা বললেন। স্ত্রী সব শুনে বললেন, পুরো ঘটনাইে তো মিথ্যা ও অবান্তর। বাদশা বললেন, গোয়েন্দা রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করতে পারব না। আমার ছেলে পরাজিত হতে পারে না। পারে না সে রণাঙ্গন হতে পালিয়ে পিছু হটতে।
বেগম সাহেবার কথা অবজ্ঞা করে ঘর হতে বেরিয়ে গেলেন বাদশা। তার পরদিন রণাঙ্গন হতে তাজা সংবাদ এলো, প্রথম দিনের সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাস্তব ঘটনা হলো, তাঁর ছেলে যুদ্ধে জয়লাভ করে ফিরে আসছেন। শুনে বেগম সাহেবা আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন।
বাদশা বেগম সাহেবাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে জানলে তোমার পুত্র পরাজয় বরণ করেনি। সে পিছু হটতে পারে না। তুমি এত দৃঢ়তার সঙ্গে কিভাবে বলতে পারলে?
তোমার নিকট এমন কী প্রমাণ ছিল যার দ্বারা গোটা হুকুমতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে? বেগম সাহেবা বললেন, তেমন কিছুই না। কেবল আল্লাহ তায়ালা আমার ইজ্জত রক্ষা করেছেন। এ এক গোপন রহস্য, যা আমি প্রকাশ করতে চাই না।
অনেক পীড়াপীড়ির পর বেগম বললেন, এ ছেলে যখন আমার গর্ভে আসে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনো সন্দেহযুক্ত খাবার যেন আমার পেটে না যায়। কারণ হালাল খাদ্যের দ্বারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী সন্তান জন্ম লাভ করে। অপরদিকে হারাম খাদ্যের দ্বারা চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়। এ শাহজাদা আমার গর্ভে থাকা অবস্থায় নয় মাস আমি এমন খাদ্য গ্রহণ করিনি, যা হালাল হওয়ার ব্যাপারে সামান্য সন্দেহ থাকতে পারে।
তাই আমি কল্পনাও করতে পারি না। তার চরিত্র খারাপ হতে পারে সুতরাং এমন আখলাকের অধিকারী মানুষের পরিচয় হলো, যুদ্ধে গেলে হয়ত শাহাদাত বরণ করবে অন্যথায় বিজয়মালা ছিনিয়ে আনবে। এ দুটো ব্যতিত তৃতীয় কিছু হতে পারে না। সুতরাং আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি আমার ছেলে পিছু হটে আসছে? ময়দান থেকে পলায়ন করে আসছে, আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি বলুন?
তাছাড়া আরও একটি কথা, এই ছেলে ভূমিষ্ট হওয়ার পরও কোনো সন্দেহযুক্ত আহার আমি গ্রহণ করিনি যাতে উক্ত হারাম খাদ্যের দ্বারা শরীরে দুগ্ধ সঞ্চার হয়ে এই খাবারের প্রভাব শাহজাদার উপর না পড়ে। এ ছাড়াও যখনই আমি তাকে দুধ পান করাতাম আগে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে দু রাকাত নফল নামায পড়ে নিতাম, যেন শাহজাদার আখলাক-চরিত্র সুন্দর হয়। উন্নত রুচিসম্পন্ন হয়। আর এজন্যই আমি আপনার হুকুমতের সকলের কথা উড়িয়ে দিতে, মিথ্যা ও অবান্তর বলতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করিনি। আমার বিশ্বাস একটুও বিচ্যুত হয়নি।

ট্যাগস :

ফেসবুকে আমরা

একজন আদর্শ মায়ের কারগুজারি

আপডেট সময় : ০৮:১৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

পৃথিবীকে সাজাতে মহান আল্লাহ বিচিত্রময় অসংখ্য মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ হলো সে সবের সেরা সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবসমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীদের বাদ দিয়ে দুনিয়া বিনির্মাণের কথা চিন্তা করা যায় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকেই একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
একজন আদর্শ মায়ের কারগুজারি
আফগানিস্তান। শুহাদায়ে কেরামের রক্তে সিঞ্চিত ভূমি। আমির আবদুর রহমান খান ছিলেন কাবুলের গভর্নর। তাঁর দাদা আমির দোস্ত মুহাম্মাদের একটি ঘটনা। কাফেরদের মোকাবেলায় তাঁর পুত্রের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন তিনি। দুই তিনদিন পর সংবাদ এলো, শাহজাদার পরাজয় আসন্ন। সেনাদের নিয়ে তিনি পিছু হটছেন। আর শক্রবাহিনী তাকে ধাওয়া করে আসছে। এ সংবাদ শুনে দোস্ত মুহাম্মাদের মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। লজ্জা, অনুশোচনা, দু:খে একেবারে ভেঙে পড়লেন তিনি। তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। একে তো পরাজয়ের গ্লানি। অন্যদিকে পুত্রের দুর্বলতা। লোকজনের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন তিনি।
বাদশা ঘরে এলেন। স্ত্রীকে পুত্রের দুর্বলতার কথা বললেন। স্ত্রী সব শুনে বললেন, পুরো ঘটনাইে তো মিথ্যা ও অবান্তর। বাদশা বললেন, গোয়েন্দা রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করতে পারব না। আমার ছেলে পরাজিত হতে পারে না। পারে না সে রণাঙ্গন হতে পালিয়ে পিছু হটতে।
বেগম সাহেবার কথা অবজ্ঞা করে ঘর হতে বেরিয়ে গেলেন বাদশা। তার পরদিন রণাঙ্গন হতে তাজা সংবাদ এলো, প্রথম দিনের সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাস্তব ঘটনা হলো, তাঁর ছেলে যুদ্ধে জয়লাভ করে ফিরে আসছেন। শুনে বেগম সাহেবা আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন।
বাদশা বেগম সাহেবাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিভাবে জানলে তোমার পুত্র পরাজয় বরণ করেনি। সে পিছু হটতে পারে না। তুমি এত দৃঢ়তার সঙ্গে কিভাবে বলতে পারলে?
তোমার নিকট এমন কী প্রমাণ ছিল যার দ্বারা গোটা হুকুমতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে? বেগম সাহেবা বললেন, তেমন কিছুই না। কেবল আল্লাহ তায়ালা আমার ইজ্জত রক্ষা করেছেন। এ এক গোপন রহস্য, যা আমি প্রকাশ করতে চাই না।
অনেক পীড়াপীড়ির পর বেগম বললেন, এ ছেলে যখন আমার গর্ভে আসে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনো সন্দেহযুক্ত খাবার যেন আমার পেটে না যায়। কারণ হালাল খাদ্যের দ্বারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী সন্তান জন্ম লাভ করে। অপরদিকে হারাম খাদ্যের দ্বারা চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়। এ শাহজাদা আমার গর্ভে থাকা অবস্থায় নয় মাস আমি এমন খাদ্য গ্রহণ করিনি, যা হালাল হওয়ার ব্যাপারে সামান্য সন্দেহ থাকতে পারে।
তাই আমি কল্পনাও করতে পারি না। তার চরিত্র খারাপ হতে পারে সুতরাং এমন আখলাকের অধিকারী মানুষের পরিচয় হলো, যুদ্ধে গেলে হয়ত শাহাদাত বরণ করবে অন্যথায় বিজয়মালা ছিনিয়ে আনবে। এ দুটো ব্যতিত তৃতীয় কিছু হতে পারে না। সুতরাং আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি আমার ছেলে পিছু হটে আসছে? ময়দান থেকে পলায়ন করে আসছে, আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি বলুন?
তাছাড়া আরও একটি কথা, এই ছেলে ভূমিষ্ট হওয়ার পরও কোনো সন্দেহযুক্ত আহার আমি গ্রহণ করিনি যাতে উক্ত হারাম খাদ্যের দ্বারা শরীরে দুগ্ধ সঞ্চার হয়ে এই খাবারের প্রভাব শাহজাদার উপর না পড়ে। এ ছাড়াও যখনই আমি তাকে দুধ পান করাতাম আগে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে দু রাকাত নফল নামায পড়ে নিতাম, যেন শাহজাদার আখলাক-চরিত্র সুন্দর হয়। উন্নত রুচিসম্পন্ন হয়। আর এজন্যই আমি আপনার হুকুমতের সকলের কথা উড়িয়ে দিতে, মিথ্যা ও অবান্তর বলতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করিনি। আমার বিশ্বাস একটুও বিচ্যুত হয়নি।