সুরায়ে এখলাছের শানে নুযুল ও ফযীলত
- আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩ ২২০ বার পঠিত
সুরায়ে এখলাছ, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত-৪
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু
১.বলুন. তিনি আল্লাহ, এক, ২. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। ৪. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
শানে নুযুল: তিরমিযী ও হাকেম প্রমুখের রেওয়ায়েতে আছে, মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ সা: কে আল্লাহ তাআলার বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সুরা নাযিল হয়। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, মদীনার ইহুদীরা এ প্রশ্ন করেছিল। এ কারণে যাহ্হাক রহ. প্রমুখ তফসীরবিদের মতে সুরাটি মদীনায় অবতীর্ণ । (কুরতুবী)
কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, মুশরিকরা আরও প্রশ্ন করেছিল- আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরী, স্বর্ণরৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? এর জওয়াবে সুরাটি অবর্তীণ হয়েছে।
এই সুরার ফযীলত: হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত আছে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা: এর কাছে এসে আরয করল: আমি এই সুরাটি খুব ভালবাসি। তিনি বললেন: এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। (ইবনে কাসীর)
হযরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ সা: বললেন: তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যায়। আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অত:পর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল, তারা একত্রিত হয়ে গেলে তিনি আগমন করলেন এবং সুরা এখলাছ পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরও বললেন: এই সুরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (মুসলিম, তিরমিযী) আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ সা: বলেন: যে ব্যক্তি সকাল বিকাল সুরা এখলাছ, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। (ইবনে কাসীর)
ওকবা ইবনে আমের রা: এর রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ সা: বলেন: আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সুরা বলছি, যা তাওরাত, ইঞ্জীল, যবুর ও কুরআন সহ সব কিতাবেই রয়েছে। রাত্রিতে তোমরা ততক্ষণ নিদ্রা যেয়োনা, যতক্ষণ সুরা এখলাছ, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা রা: বলেন: সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি।
‘‘কুলহুওয়াল্লাহু আহাদ’’ বলুন, কথার মধ্যে রাসুলুল্লাহ সা: এর রেসালতের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে পথ প্রদর্শনের আদেশ রয়েছে। আল্লাহ শব্দটি এমন এক সত্তার নাম, তিনি চিরকাল আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তিনি সর্বগুণের আধার ও সর্বদোষ থেকে পবিত্র। ওয়াহিদু ও আহাদ উভয়ের অর্থ এক। কিন্তু আহাদ শব্দের অর্থে এটাও শামিল যে, তিনি কোন এক অথবা একাধিক উপাদান দ্বারা তৈরী নন, তাঁর মধ্যে একাধিকত্বের কোন সম্ভাবনা নেই এবং তিনি কারও তূল্য নন। এটা তাদের সেই প্রশ্নের জওয়াব, যাতে বলা হয়েছিল, আল্লাহ কিসের তৈরী? এই সংক্ষিপ্ত বাক্যে সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কিত সকল আলোচনা এসে গেছে এবং কুল শব্দের মধ্যে নবুওয়াতের কথা এসে গেছে। অথচ এসব আলোচনা বিরাটকায় পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা হয়।
‘‘আল্লাহু স্সামাদু’’ সামাদ শব্দের অর্থ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের অনেক উক্তি আছে। তিবরানী এসব উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন: এগুলো সবই নির্ভুল। এতে আমাদের পালনকর্তার গুণাবলীই ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু সামাদ এর আসল অর্থ সেই সত্তা, যাঁর কাছে মানুষ আপন অভাব ও প্রয়োজন পেশ করে এবং যাঁর সমান মহান কেই নয়। সারকথা এই যে, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। (ইবনে কাসীর)
‘‘লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম য়ুলাদ’’ যারা আল্লাহর বংশ পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, এটা তাদের জওয়াব। সন্তন প্রজনন সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য -স্রষ্টার নয়। অতএব, তিনি কারও সন্তান নন এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।
‘‘ওয়ালাময়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ’’ অর্থাৎ, কেউ তাঁর সমতুল্য নয় এবং আকার-আকৃতিতে কেউ তাঁর সাথে সামঞ্জস্য রাখে না।