ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ব্যারিস্টার নাজির ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে শিশুদের ফ্রি খৎনা প্রদান Logo সিলেটের বিশ্বনাথে ফাতেমা খাতুন আদর্শ মহিলা মাদরাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে বৃদ্ধা ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার ঘর দখলের অভিযোগ :প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo জামিয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদরাসার ৬৬ তম বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন ২৮ ডিসেম্বর Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে সংবর্ধনা Logo সিলেটের বিশ্বনাথে হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের ২৯তম হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন Logo সিলেটের বিশ্বনাথে আল মাদরাসাতুল হানাফিয়ায় দুই শিক্ষানুরাগীকে সংবর্ধনা Logo বিশ্বনাথে নব নিযুক্ত শিক্ষা অফিসার নাস্তিক মাহমুদুল হক অপসারণ ও অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্টিত Logo ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে ৯ দফা ঘোষণা Logo তাবলিগের রাহবার আলেমরা, অন্য কেউ নয়

প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

ইসলামিক মিডিয়া ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৩:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩ ১৮৫ বার পঠিত

ইসলামিক মিডিয়া ডেস্ক: প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত(Madhabkunda Jolopropat)। এটি দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম ঘটে এখানে। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি এর গা বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নিচে পড়ছে। অবিরাম পতনের ফলে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডের। আর কুণ্ডের প্রবাহমান স্রোতধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মাধবকুণ্ডের নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নিচে একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি ওই সন্ন্যাসীর পদবন্দনা ও স্তূতি করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে তাকে এ কুণ্ডে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মাধব, মাধব মাধব নামে দৈববাণী হয়। সম্ভবত এ থেকেই মাধবকুণ্ড নামের উৎপত্তি। আবার কারও কারও মতে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম মাধব এবং এর নামানুসারে তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।

এ কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। ছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গামারা ছড়া আর নিচের অংশের নাম মাধবছড়া। পাহাড়ের উপর থেকে পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হঠাৎ খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায়। এতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি বড়, একটি ছোট। বর্ষাকালে ধারা দুটি মিশে যায়। জলরাশি যেখানে পড়ছে তার চতুর্দিকে পাহাড়, নিচে কুণ্ড। কুণ্ডের মধ্যভাগে অনবরত পানি পড়ছে। এই স্থান অনেক গভীর। কুণ্ডের ডান পাশে একটি পাথরের গহ্বর বা গুহার সৃষ্টি হয়েছে।

১৩৪২ সালে বিষ্ণুদাস সন্ন্যাসী মাধবকুণ্ডের পশ্চিমাংশে কমলা বাগান তৈরি করেন, সেই কমলা বাগান আজও আছে। মূল জলপ্রপাতের বাম পাশে প্রায় ২০০ গজ দূরে আরও একটি পরিকুণ্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সেখানে খুব কষ্ট করে যেতে হয়। যাতায়াতের সুবিধা করে দিলে সেটি দেখতেও অনেকেই ভিড় করবে।মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ভূগোল এবং দূরত্বএটির অবস্হান ২৪° ৩৮’২১”N ৯২° ১৩’১৬E এবং প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) উঁচু। এটা দাকশিনবাঘ রেল স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে, মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে কুলাউড়া, জুরী, কাঁঠালতলী হয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা শহর থেকে ৩৫০কিমি দূরে।কিভাবে যাবেনসিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে গাড়িতে যেতে পারেন অথবা কুলাউরা সংযোগস্থল থেকে ট্রেনে যেতে পারেন। যাত্রা পথে দেখতে পাবেন চা বাগানের অপুরুপ সৌন্দর্য।কোথায় থাকবেনএখানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে একটি রেস্টুরেন্ট, রেস্টহাউস ও বসার জন্য কিছু শেড নির্মাণ করে। শীতকালে এখানে শত শত পর্যটকের আগমন ঘটে। আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যাওয়ার সময়

ভ্রমণের জন্যে শীতকাল উপযুক্ত সময় হলেও ঝর্ণাতে শীতকালে পানি কম থাকে। যদি সেই দিক চিন্তা করেন তাহলে বর্ষা বা তার আশেপাশের সময়ে মাধবকুন্ড ঝর্ণা ভ্রমণ করলে তখন ঝর্ণায় অনেক পানি থাকবে।

মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যাবার উপায়

মাধবকুন্ড ঝর্ণায় যেতে পারবেন অনেক ভাবেই। আপনি কোন জায়গা থেকে যাবেন তার উপর নির্ভর করে নিচে কয়েকটি পদ্ধতিতে মাধবকুণ্ড যাবার উপায় দেওয়া হলোঃ

ঢাকা থেকে মাধবকুন্ড

ঢাকা থেকে বাসে গেলে সবচেয়ে সহজ পথ হবে আপনি বিয়ানীবাজার গামী শ্যামলী পরিবহন অথবা এনা পরিবহনে করে সরাসরি কাঠালতলী বাজার নেমে গেলে। সেখান থেকে রিসার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) টাকা বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) টাকা ভাড়া দিয়ে মাধবকুন্ড থেকে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যায়। পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে মৌলভীবাজার এর কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে আপনার (শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৮০-৬৩৯ টাকা, সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা)। কুলাউড়া স্টেশন থেকে কাঠালতলী বাজার হয়ে মধবকুন্ড যেতে হবে। এইক্ষেত্রে আপনি রিসার্ভ সিএনজি (৪০০-৬০০) নিয়ে মাধবকুন্ড যেতে পারবেন অথবা কুলাউড়া থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঠালতলী বাজার গিয়ে সেখান থেকে আবার রিসার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) টাকা বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) টাকা ভাড়া দিয়ে মাধবকুন্ড থেকে পারবেন।

মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক

যদি মৌলভীবাজার শহর থেকে মাধবকুন্ড যেতে চান তাহলে যাবার উপায় দুইভাবে হতে পারে। হয় আপনি সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস রিসার্ভ করে নিতে হবে। নয়তো বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে উঠে কুলাউড়া পার হয়ে বড়লেখার আগেই কাঁঠালতলী বাজারে নেমে যাবেন। সেখান থেকে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন মাধবকুন্ড।

সিলেট থেকে মাধবকুন্ড

সিলেট থেকে মাধবকুন্ড যেতে চাইলে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে বড়লেখা হয়ে যে বাস কুলাউড়া যায় সেই বাসে উঠে যেতে পারেন অথবা বড়লেখা চলে আসবেন। বড়লেখা থেকে রিসার্ভ সিএনজি দিয়ে মাধবকুন্ড যেতে পারবেন অথবা বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঠালতলী বাজার এসে সেখানে থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি তে করে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুন্ড

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুন্ড যেতে চাইলে সরাসরি সিএনজি/জীপ রিসার্ভ করে যেতে পারবেন। অথবা বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে করে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজারে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি দিয়ে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

মাধবকুন্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন সেখানে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সিলেট, মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রি যাপন করলে এতে পরদিন যেকোন জায়গায় আপনার যাত্রা সহজ হবে। আর সেসব জায়গায় থাকার অনেক ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার পছন্দমত হোটেল বা কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

মাধবকুণ্ডে মাঝারি মানের রেস্টুরেন্ট আছে তবে সেখানে খাবারের দাম একটু বেশী। তাই প্রয়োজনে নিজেদের খাবার বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা সিলেট ফিরে জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের প্রায় ৩০ রকম ভর্তা চেখে দেখতে পারেন। মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল শহরেও অনেক মানের খাবার হোটেল আছে। আপনার পছন্দমত কোন হোটেল থেকে খেয়ে নিতে পারবেন।

 

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ছাড়াও মৌলভীবাজারের আরও কিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সেইভাবেই গুছিয়ে নিতে পারেন। কত সময়ের জন্যে যাচ্ছেন, কি কি দেখবেন তা হিসেব করেই সে পরিকল্পনা করতে পারেন। মৌলভীবাজার জেলার সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যানচা বাগানহামহাম ঝর্ণা, বাইক্কা বিল, মাধবপুর চা বাগান ও লেক, নবাব বাড়ি, হাকালুকি হাওর, মনিপুরী পল্লী সহ আরও নানা স্থাপনা ঘুরে দেখতে পারেন।

মাধবকুন্ড ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

  • কম খরচে মাধব
  • কুন্ড জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে চাইলে ট্রেন ও লোকাল সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
  • খরচ কমাতে দলগত ভাবে ঘুরতে পারেন, টিমে সদস্য সংখ্যা যেন সিএনজি কতজন বসবেন সে অনুযায়ী হয়।
  • মাধবকুন্ড একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব, আগের রাতে রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুরে রাতে আপনার গন্তব্যে ফিরে যেতে যান।
  • স্থানীয় যাতায়াত এর জন্যে ভাড়া দরদাম করে নিবেন। টূরিস্ট দেখলে অতিরিক্ত টাকা চায়।
  • সিজনে ও ছুটির দিনে গেলে সিএনজি/জিপ ভাড়া একটু বেশি লাগবে।
  • মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের উত্তাল রূপ দেখার সময় বর্ষা কালেই।
  • ঝর্ণার আশেপাশের পাথর অনেক পিচ্ছিল, হাটা চলায় সাবধান থাকবেন।
  • নোটিশ বোর্ডে যা লিখা আছে তা পালন করুন।
  • জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর, ভুলেও সেখানে যাবেন না।
  • বর্ষায় অনেক পানি থাকে তাই ঝিরিতে অনেক স্রোত, সাবধান থাকবেন।
  • ঝর্ণার পানিতে গোসল করলে আগেই অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে নিন।
  • যে কোন বিষয়ে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নিন।
ট্যাগস :

ফেসবুকে আমরা

প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

আপডেট সময় : ০৩:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

ইসলামিক মিডিয়া ডেস্ক: প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত(Madhabkunda Jolopropat)। এটি দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম ঘটে এখানে। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি এর গা বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নিচে পড়ছে। অবিরাম পতনের ফলে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডের। আর কুণ্ডের প্রবাহমান স্রোতধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মাধবকুণ্ডের নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নিচে একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি ওই সন্ন্যাসীর পদবন্দনা ও স্তূতি করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে তাকে এ কুণ্ডে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মাধব, মাধব মাধব নামে দৈববাণী হয়। সম্ভবত এ থেকেই মাধবকুণ্ড নামের উৎপত্তি। আবার কারও কারও মতে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম মাধব এবং এর নামানুসারে তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।

এ কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। ছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গামারা ছড়া আর নিচের অংশের নাম মাধবছড়া। পাহাড়ের উপর থেকে পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হঠাৎ খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায়। এতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি বড়, একটি ছোট। বর্ষাকালে ধারা দুটি মিশে যায়। জলরাশি যেখানে পড়ছে তার চতুর্দিকে পাহাড়, নিচে কুণ্ড। কুণ্ডের মধ্যভাগে অনবরত পানি পড়ছে। এই স্থান অনেক গভীর। কুণ্ডের ডান পাশে একটি পাথরের গহ্বর বা গুহার সৃষ্টি হয়েছে।

১৩৪২ সালে বিষ্ণুদাস সন্ন্যাসী মাধবকুণ্ডের পশ্চিমাংশে কমলা বাগান তৈরি করেন, সেই কমলা বাগান আজও আছে। মূল জলপ্রপাতের বাম পাশে প্রায় ২০০ গজ দূরে আরও একটি পরিকুণ্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সেখানে খুব কষ্ট করে যেতে হয়। যাতায়াতের সুবিধা করে দিলে সেটি দেখতেও অনেকেই ভিড় করবে।মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ভূগোল এবং দূরত্বএটির অবস্হান ২৪° ৩৮’২১”N ৯২° ১৩’১৬E এবং প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) উঁচু। এটা দাকশিনবাঘ রেল স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে, মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে কুলাউড়া, জুরী, কাঁঠালতলী হয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা শহর থেকে ৩৫০কিমি দূরে।কিভাবে যাবেনসিলেট বা মৌলভীবাজার থেকে গাড়িতে যেতে পারেন অথবা কুলাউরা সংযোগস্থল থেকে ট্রেনে যেতে পারেন। যাত্রা পথে দেখতে পাবেন চা বাগানের অপুরুপ সৌন্দর্য।কোথায় থাকবেনএখানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে একটি রেস্টুরেন্ট, রেস্টহাউস ও বসার জন্য কিছু শেড নির্মাণ করে। শীতকালে এখানে শত শত পর্যটকের আগমন ঘটে। আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যাওয়ার সময়

ভ্রমণের জন্যে শীতকাল উপযুক্ত সময় হলেও ঝর্ণাতে শীতকালে পানি কম থাকে। যদি সেই দিক চিন্তা করেন তাহলে বর্ষা বা তার আশেপাশের সময়ে মাধবকুন্ড ঝর্ণা ভ্রমণ করলে তখন ঝর্ণায় অনেক পানি থাকবে।

মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যাবার উপায়

মাধবকুন্ড ঝর্ণায় যেতে পারবেন অনেক ভাবেই। আপনি কোন জায়গা থেকে যাবেন তার উপর নির্ভর করে নিচে কয়েকটি পদ্ধতিতে মাধবকুণ্ড যাবার উপায় দেওয়া হলোঃ

ঢাকা থেকে মাধবকুন্ড

ঢাকা থেকে বাসে গেলে সবচেয়ে সহজ পথ হবে আপনি বিয়ানীবাজার গামী শ্যামলী পরিবহন অথবা এনা পরিবহনে করে সরাসরি কাঠালতলী বাজার নেমে গেলে। সেখান থেকে রিসার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) টাকা বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) টাকা ভাড়া দিয়ে মাধবকুন্ড থেকে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যায়। পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে মৌলভীবাজার এর কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যেতে হবে আপনার (শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৮০-৬৩৯ টাকা, সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা)। কুলাউড়া স্টেশন থেকে কাঠালতলী বাজার হয়ে মধবকুন্ড যেতে হবে। এইক্ষেত্রে আপনি রিসার্ভ সিএনজি (৪০০-৬০০) নিয়ে মাধবকুন্ড যেতে পারবেন অথবা কুলাউড়া থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঠালতলী বাজার গিয়ে সেখান থেকে আবার রিসার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) টাকা বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) টাকা ভাড়া দিয়ে মাধবকুন্ড থেকে পারবেন।

মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক

যদি মৌলভীবাজার শহর থেকে মাধবকুন্ড যেতে চান তাহলে যাবার উপায় দুইভাবে হতে পারে। হয় আপনি সিএনজি/জীপ/মাইক্রোবাস রিসার্ভ করে নিতে হবে। নয়তো বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে উঠে কুলাউড়া পার হয়ে বড়লেখার আগেই কাঁঠালতলী বাজারে নেমে যাবেন। সেখান থেকে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন মাধবকুন্ড।

সিলেট থেকে মাধবকুন্ড

সিলেট থেকে মাধবকুন্ড যেতে চাইলে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে বড়লেখা হয়ে যে বাস কুলাউড়া যায় সেই বাসে উঠে যেতে পারেন অথবা বড়লেখা চলে আসবেন। বড়লেখা থেকে রিসার্ভ সিএনজি দিয়ে মাধবকুন্ড যেতে পারবেন অথবা বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি দিয়ে কাঠালতলী বাজার এসে সেখানে থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি তে করে মাধবকুণ্ড যেতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুন্ড

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুন্ড যেতে চাইলে সরাসরি সিএনজি/জীপ রিসার্ভ করে যেতে পারবেন। অথবা বড়লেখা গামী কোন লোকাল বাসে করে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজারে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে রিসার্ভ/লোকাল সিএনজি দিয়ে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

মাধবকুন্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে থাকতে পারবেন সেখানে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সিলেট, মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত্রি যাপন করলে এতে পরদিন যেকোন জায়গায় আপনার যাত্রা সহজ হবে। আর সেসব জায়গায় থাকার অনেক ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার পছন্দমত হোটেল বা কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

মাধবকুণ্ডে মাঝারি মানের রেস্টুরেন্ট আছে তবে সেখানে খাবারের দাম একটু বেশী। তাই প্রয়োজনে নিজেদের খাবার বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতে পারেন কিংবা সিলেট ফিরে জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের প্রায় ৩০ রকম ভর্তা চেখে দেখতে পারেন। মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল শহরেও অনেক মানের খাবার হোটেল আছে। আপনার পছন্দমত কোন হোটেল থেকে খেয়ে নিতে পারবেন।

 

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ছাড়াও মৌলভীবাজারের আরও কিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সেইভাবেই গুছিয়ে নিতে পারেন। কত সময়ের জন্যে যাচ্ছেন, কি কি দেখবেন তা হিসেব করেই সে পরিকল্পনা করতে পারেন। মৌলভীবাজার জেলার সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যানচা বাগানহামহাম ঝর্ণা, বাইক্কা বিল, মাধবপুর চা বাগান ও লেক, নবাব বাড়ি, হাকালুকি হাওর, মনিপুরী পল্লী সহ আরও নানা স্থাপনা ঘুরে দেখতে পারেন।

মাধবকুন্ড ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

  • কম খরচে মাধব
  • কুন্ড জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে চাইলে ট্রেন ও লোকাল সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
  • খরচ কমাতে দলগত ভাবে ঘুরতে পারেন, টিমে সদস্য সংখ্যা যেন সিএনজি কতজন বসবেন সে অনুযায়ী হয়।
  • মাধবকুন্ড একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব, আগের রাতে রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুরে রাতে আপনার গন্তব্যে ফিরে যেতে যান।
  • স্থানীয় যাতায়াত এর জন্যে ভাড়া দরদাম করে নিবেন। টূরিস্ট দেখলে অতিরিক্ত টাকা চায়।
  • সিজনে ও ছুটির দিনে গেলে সিএনজি/জিপ ভাড়া একটু বেশি লাগবে।
  • মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের উত্তাল রূপ দেখার সময় বর্ষা কালেই।
  • ঝর্ণার আশেপাশের পাথর অনেক পিচ্ছিল, হাটা চলায় সাবধান থাকবেন।
  • নোটিশ বোর্ডে যা লিখা আছে তা পালন করুন।
  • জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর, ভুলেও সেখানে যাবেন না।
  • বর্ষায় অনেক পানি থাকে তাই ঝিরিতে অনেক স্রোত, সাবধান থাকবেন।
  • ঝর্ণার পানিতে গোসল করলে আগেই অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে নিন।
  • যে কোন বিষয়ে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নিন।